For Advertisement

‘আমাদের কোনো ধারণাই নেই যে হামাসের হামলাটি কীভাবে সংঘটিত হলো।’

10 October 2023, 11:18:17

হামাস যোদ্ধাদের ‘আল-আকসা স্ট্রম’ নামের সামরিক অভিযানে ইসরাইলি সেনাবাহিনীসহ দেশটির সীমান্ত এলাকায় বসতি স্থাপনকারীরা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। তবে এ হামলাটিকে অনেকে ইসরাইলের গোয়েন্দা ব্যর্থতা বলে মনে করেন। এ বিষয়ে ইসরাইলি কর্মকর্তারা বলেন, আমাদের কোনো ধারণাই নেই যে হামাসের হামলাটি কীভাবে সংঘটিত হলো।

এত শক্তিশালী অবকাঠামো, প্রযুক্তিতে এগিয়ে থাকার পরও ইসরাইলের গোয়েন্দ সংস্থা কেন আগে থেকে এই হামলা সম্পর্কে কিছুই জানতে পারল না – তা নিয়ে এখন গবেষণা চলছে।

হামাসের শত শত সশস্ত্র সদস্য ইসরাইল আর গাজা উপত্যকার মধ্যকার সুরক্ষিত সীমানা অঞ্চল পার করে ইসরায়েলের ভেতরে প্রবেশ করে। একই সময় হাজার হাজার রকেট ছোঁড়া হয় ইসরাইলের ভেতরে।

ইসরায়েইর ঘরোয়া গোয়েন্দা সংস্থা শিন বেত, গুপ্তচর সংস্থা মোসাদ এবং ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী মিলে আগে থেকে এই হামলার কোনো ধারণাই পায়নি। এই বিষয়টিকেই অত্যাশ্চর্য মনে করা হচ্ছে।

এই সংস্থাগুলো যদি হামলার কোনো ইঙ্গিত পেয়েও থাকে, তাহলেও হয়তো তারা তার গুরুত্ব বুঝতে পারেনি এবং সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নিতে পারেনি।

ইসরাইলের গোয়েন্দা সংস্থাকে বলা হয় মধ্যপ্রাচ্যের সবচেয়ে বিস্তৃত গোয়েন্দা সংস্থা। একইসঙ্গে ওই অঞ্চলের যেকোনো গোয়েন্দা সংস্থার তুলনায় ইসরাইলের গোয়েন্দা সংস্থার অর্থায়নও সবচেয়ে বেশি বলে মনে করা হয়।

ফিলিস্তিনের সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর ভেতরেও তাদের গোয়েন্দা আছে। এছাড়া লেবানন, সিরিয়াসহ অন্যান্য অনেক দেশের সশস্ত্র গোষ্ঠীর মধ্যেও তাদের গোয়েন্দা রয়েছে।

অতীতে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন সশস্ত্র গোষ্ঠীর নেতাদের গুপ্তঘাতকের সাহায্যে হত্যা করেছে ইসরাইলের গোয়েন্দা বাহিনী। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সেসব নেতাদের কার্যক্রম আগে থেকে জেনে পদক্ষেপ নিতো ইসরাইলি গোয়েন্দারা।

এসব হামলার কোনোটা ড্রোন আক্রমণের মাধ্যমে করা হয়েছে। এজেন্টরা লক্ষ্যবস্তুর গাড়িতে জিপিএস ট্র্যাকার রেখে যাওয়ার পর নিখুঁতভাবে ড্রোনের মাধ্যমে হামলা করে হত্যাকাণ্ড সম্পন্ন করা হয়েছে।

আবার কখনও কখনও লক্ষ্যবস্তুর মোবাইল ফোন বিস্ফোরণের মাধ্যমেও এরকম হত্যাকাণ্ড সম্পন্ন করা হয়েছে।

গাজার সঙ্গে ইসরাইলের সীমানা চিহ্নিত করা বেষ্টনিতে ক্যামেরার পাশাপাশি মোশন সেন্সরও রয়েছে যার মাধ্যমে বেড়ার আশেপাশের কোনো প্রাণীর নড়াচড়া শনাক্ত করা যায়।

এছাড়া সীমান্তরক্ষীদের নিয়মিত টহল তো আছেই।

শনিবার হওয়া হামলার মতো অভিযান আটকানোর জন্যই বিশেষভাবে তৈরি করা হয়েছে এই বেড়াগুলো।

তারপরও হামাস যোদ্ধারা যেভাবে বেড়া কেটে, সমুদ্রপথে বা প্যারাগ্লাইডারের সাহায্যে যেভাবে ইসরাইলের সীমানার ভেতরে প্রবেশ করেছে, তা সত্যিই বিস্ময়কর।

ইসরাইলের প্রশিক্ষিত গোয়েন্দাদের নাকের ডগায় থেকে হাজার হাজার রকেট জড়ো করা বা এমন সংগঠিত আক্রমণ করার জন্য নিশ্চিতভাবেই হামাস সদস্যরা ব্যাপক পূর্ব প্রস্তুতি নিয়েছে।

স্বাভাবিকভাবেই ইসরাইলের মিডিয়া তাদের দেশের সেনাবাহিনী আর রাজনৈতিক নেতাদের এই প্রশ্নই করছে – কীভাবে এটা হওয়া সম্ভব হলো?

ইসরাইলের কর্মকর্তারা আমাকে জানিয়েছেন, এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে বড় ধরনের একটি তদন্ত শুরু হয়েছে। তবে এই হামলার পর সবার মধ্যে যে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে – কীভাবে এটা সম্ভব হলো – তা হয়তো অনেক বছর ধরে মানুষের মধ্যে থাকবে।

কিন্তু এই মুহুর্তে ইসরাইলের সামনে আরও গুরুত্বপূর্ণ কাজ রয়েছে। তাদের দক্ষিণের সীমান্তবর্তী এলাকায় ঢুকে পড়া হামাস সদস্যদের দমন করা আর সীমান্তবর্তী এলাকার ইসরাইল অংশে হামাসের হাতে জিম্মি থাকা নাগরিকদের মুক্ত করা এখন ইসরাইলের কর্তৃপক্ষের মূল চিন্তার বিষয়।

তাদের যেসব নাগরিক জিম্মি রয়েছেন, তাদের মুক্ত করার জন্য তাদের হয় হামাসের সঙ্গে আলোচনায় যেতে হবে অথবা সশস্ত্র উদ্ধার মিশনে নামতে হবে।

তবে ইসরাইলের জন্য এর চেয়েও বড় চিন্তার বিষয় হামাসের সমর্থক গোষ্ঠীদের সামাল দেওয়া।

হামাস এরই মধ্যে অস্ত্রের জন্য তাদের মিত্র ইরান আর লেবাননভিত্তিক সশস্ত্র গোষ্ঠী হেজবুল্লাহর কাছে সহায়তা চেয়েছে।

এখন গাজা উপত্যকা ছাড়িয়ে পশ্চিম তীরে সংঘাত ছড়িয়ে পড়া আর দেশের উত্তরাঞ্চলের সীমানা দিয়ে সশস্ত্র হেজবুল্লাহ সেনাদের প্রবেশ করা ঠেকানো ইসরাইলের সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।

সূত্র: বিবিসি

For Advertisement

Unauthorized use of news, image, information, etc published by Purbakash is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.

Comments: