For Advertisement
ব্যাংকের চেয়ারম্যান-এমডিদের ‘দ্বন্দ্ব’ বন্ধে হুঁশিয়ারি বাংলাদেশ ব্যাংকের
সম্প্রতি সময়ে বেশ কয়েকটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) পর্ষদের চাপে পদত্যাগ করেন। এ নিয়ে বেশ আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয় ব্যাংক পাড়ায়। প্রধান নির্বাহীদের মধ্যে সৃষ্টি হয় এক ধরনের আতঙ্ক। বিষয়টি নিয়ে নড়েচড়ে বসে নিয়ন্ত্রণ সংস্থা। এমন পরিস্থিতিতে ব্যাংকের চেয়ারম্যান-এমডিদের ‘দ্বন্দ্ব’ বন্ধ করে কর্পোরেট গর্ভনেন্স মেনে চলার জন্য কড়া বার্তা দিয়েছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর আব্দুল রউফ তালুকদার। একই সঙ্গে ডলার কারসাজি রোধে সতর্ক বার্তা দিয়েছেন গভর্নর।
বুধবার (২০ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশ ব্যাংকে বেসরকারি ব্যাংক উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকসের (বিএবি) নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে গভর্নর এ তাগিদ দেন। বৈঠকে বিএবি চেয়ারম্যান মো. নজরুল ইসলাম মজুমদারের নেতৃত্বে ৮ সদস্যদের একটি প্রতিনিধি দল অংশ নেয়। এ সময় বাংলাদেশ ব্যাংকের তিনজন ডেপুটি গভর্নর, নির্বাহী পরিচালকসহ সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।বৈঠকে এমডিদের সঙ্গে চেয়ারম্যানের দ্বন্দ্ব বন্ধ করা, বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলারস অ্যাসোসিয়েশনের (বাফেদা) বেঁধে দেওয়া দামের চেয়ে বেশি মূল্যে ডলার কেনাবেচা না করা, মূল্যস্ফীতির চাপ নিয়ন্ত্রণে যথাযথ পদক্ষেপ বাস্তবায়ন ও ঋণপত্রের (এলসি) মাধ্যমে ডলার পাচারসহ ব্যাংকগুলোর কর্পোরেট গর্ভনেন্সের যাবতীয় নীতিমালা মেনে চলার বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এ সময় ডলার কারসাজি রোধে ব্যাংক চেয়ারম্যানদের কড়া বার্তা দেন গভর্নর।
বৈঠক প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মেজবাউল হক পূর্বাকাশ কে বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের আমন্ত্রণেই বিএবির চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল এসেছিল। এটা পূর্ব নির্ধারিত বৈঠক। ব্যাংকের চেয়ারম্যানদের সঙ্গে বর্তমান দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা, মূল্যস্ফীতি চাপ, রিজার্ভ পরিস্থিতি, ডলার, এক্সচেঞ্জ রেট এবং আমদানি রপ্তানি বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে অর্থনৈতিক অবস্থা উন্নয়নে বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে; এগুলো তাদের জানানো হয়েছে। পদক্ষেপগুলো বাস্তবায়নে তাদের সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে। বিএবির পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা করার আশ্বাস দিয়েছেন।গভর্নর ব্যাংকগুলোর কর্পোরেট গভর্নেন্স মেনে চলার তাগিদ দিয়েছেন জানিয়ে মুখপাত্র বলেন, দেখা যাচ্ছে বাফেদার বেঁধে দেওয়া দামের বাইরে গিয়ে অনেকে ডলার কেনাবেচা করছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা মানছে না। এমডিদের সঙ্গে চেয়ারম্যানদের দ্বন্দ্ব লাগছে। বৈঠকে এসব বিষয়গুলো সমাধানে কর্পোরেট গভর্নেন্স মানতে বলা হয়েছে।ঘোষণার চেয়ে বেশি দামে আমদানিকারকের কাছে ডলার বিক্রি করায় বেসরকারি খাতের ১০ ব্যাংকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ বিষয়ে জানতে চাইলে মুখপাত্র মেজবাউল হক বলেন, বেশি দামে ডলার বিক্রির জন্য এসব ব্যাংকের ট্রেজারি-প্রধান দায় এড়াতে পারেন না। এ বিষয়ে ব্যাংকগুলোর কাছে পাঠানো চিঠিতে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।ডলার কারসাজিতে অভিযুক্তদের কি শাস্তি দেওয়া হবে? এমন প্রশ্নের জবাবে মুখপাত্র বলেন, ব্যাংক কোম্পানি আইনের ১০৯ (৭) ধারা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সেখানে শাস্তির বিষয় উল্লেখ করা আছে।
ব্যাংক কোম্পানি আইনের ১০৯ (৭) ধারা অনুযায়ী, এই অপরাধে কমপক্ষে ২০ হাজার থেকে সর্বোচ্চ ২ লাখ টাকা জরিমানা আরোপ করা যেতে পারে। যদি আইনের একই ধারার লঙ্ঘন অব্যাহত থাকে, তাহলে প্রথম দিনের পর প্রতিদিনের জন্য অতিরিক্ত এক হাজার টাকা জরিমানা আরোপ করা যায়।ঘোষণার চেয়ে বেশি দামে আমদানিকারকের কাছে ডলার বিক্রি করায় বেসরকারি খাতের ১০ ব্যাংকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে গত সোমবার চিঠি দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। এর অংশ হিসেবে এসব ব্যাংকের ট্রেজারি-প্রধানকে জরিমানা করার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। ট্রেজারি বিভাগ ব্যাংকের টাকা ও ডলারের চাহিদা-জোগানের বিষয়টি নিশ্চিত করে থাকে। কোনো কোনো ব্যাংকে ট্রেজারি বিভাগের প্রধান পদে উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদমর্যাদার কর্মকর্তাও রয়েছেন।
বিভিন্ন সূত্র থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, এ ১০ ব্যাংকের মধ্যে রয়েছে মার্কেন্টাইল ব্যাংক, ব্র্যাক ব্যাংক, প্রিমিয়ার ব্যাংক, মধুমতি ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, মিডল্যান্ড ব্যাংক, আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক, শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক ও ট্রাস্ট ব্যাংক।রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর গত বছরের মার্চ থেকে দেশে ডলার-সংকট প্রকট আকার ধারণ করে। এ সংকট মোকাবিলায় শুরুতে ডলারের দাম বেঁধে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। কিন্তু এতে সংকট আরও বেড়ে যায়। পরে গত সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশ ব্যাংক ডলারের দাম নির্ধারণের দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়ায়। এ দায়িত্ব দেওয়া হয় এবিবি ও বাফেদার ওপর। এর পর থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের পরামর্শে এই দুই সংগঠন মিলে রপ্তানি ও প্রবাসী আয় এবং আমদানি দায় পরিশোধের ক্ষেত্রে ডলারের দাম নির্ধারণ করে আসছে।
সব শেষ সেপ্টেম্বরের বেঁধে দেওয়া দাম অনুযায়ী, পণ্য বা সেবার রপ্তানি ও প্রবাসী আয়ের ক্ষেত্রের ডলারের দাম ১০৯ টাকা ৫০ পয়সা। অন্যদিকে আমদানিকারকদের কাছে এখন ১১০ টাকা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। কিন্তু অভিযুক্ত ব্যাংকগুলোতে প্রতি ডলারে ১১৪-১১৫ টাকা দাম নিয়েছে।
For Advertisement
Unauthorized use of news, image, information, etc published by Purbakash is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.
Comments: