For Advertisement
শরীরচর্চা : বিলাসিতা নয়, প্রয়োজন!

শীত শুরুর আগে অনেকেই জিমে ভর্তি হওয়ার চিন্তা করেন। অবশ্য শরীর সুস্থ রাখতে বছরের ১২ মাসই সবার ব্যায়াম করা উচিত। আধুনিক জীবন ধারায় শরীরচর্চা এখন আর বিলাসিতা নয়, প্রয়োজন। তবে জিমে গিয়ে ব্যায়াম করার ক্ষেত্রে কিছু নিয়ম-কানুন মেনে চলতে হবে। নইলে হিতে বিপরীত হতে পারে।অনেকেই জিমে ভর্তি হওয়ার চিন্তা করেন। অবশ্য শরীর সুস্থ রাখতে বছরের ১২ মাসই সবার ব্যায়াম করা উচিত। তবে জিমে গিয়ে ব্যায়াম করার ক্ষেত্রে কিছু নিয়ম-কানুন মেনে চলতে হবে। নইলে হিতে বিপরীত হতে পারে।
বর্তমানে জিম মানুষের জীবনে একটি অন্যতম প্রয়োজনে পরিণত হয়েছে। কারণ আমাদের কর্মজীবন ও অন্যান্য ব্যস্ততার ভিড়ে ভুলে যাই নিজেদের সুস্থ রাখতে। এ ছাড়া নানান কারণে সঠিক সময়ে খাওয়া সম্ভব হয় না। ফলে অনিয়মের কারণে শরীরের ওজনের তারতম্য ঘটে। এতে স্বাস্থ্যও ঝুঁকির মধ্যে পড়ে যায়। তবে শুধু মোটা হলেই জিম করতে হবে, এই ধারণাটি একদম ভুল। যে কোনো বয়সের মানুষ শরীরকে ফিট রাখতে হলে সপ্তাহে কমপক্ষে ৪ দিন হলেও শারীরিক ব্যায়াম করা প্রয়োজন। আর মন ভালো রাখতেও দরকার সুস্থ দেহ।
তিন ধরনের মানুষ জিমে যায়। এক ধরনের মানুষ জিমে যায় ওয়েট গেইনের জন্য, অর্থাৎ তাদের ওজনে কম কিন্তু সঠিক শরীরচর্চা ও খাদ্য গ্রহণের মাধ্যমে পর্যাপ্ত ওজন বৃদ্ধি করতে পারেন। এদের মধ্যে যাদের উচ্চতা অনুযায়ী শরীরে পর্যাপ্ত পেশি গঠন হয়নি তাদের জন্যই মূলত ‘ওয়েট গেইন’ জিম। ওয়েট ব্যায়াম যারা করবেন তাদের মূলত প্রথমে কার্ডিও ভাসকুলার ট্রেনিং দেওয়া হয়। এই ধরনের মধ্যে রয়েছে রানিং, সাইক্লিং, জাম্পিং, রোপিং। এই ধরনের ব্যায়ামের মাধ্যমে শরীরে ক্যালরি বার্ন হয়। এগুলো নিয়মিত করার মাধ্যমে আপনি ফিট থাকতে পারবেন, খুব সহজে মোটাও হবেন না। বিশেষ করে আপনার শরীরের সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ হার্ট কিংবা হৃৎপিণ্ড ভালো থাকবে। এটি খুব সাধারণ এক ধরনের শরীরচর্চা যা সবার জন্য প্রয়োজন। এই ধরনের জিমে ব্যক্তি অভ্যস্ত হয়ে গেলে পরবর্তীকালে তাকে ‘ওয়েট ট্রেনিং’ দেওয়া হয়।
আরেক ধরনের জিম হচ্ছে ‘বডি বিল্ডিং’। এই জিমের মাধ্যমে নিজের শরীরের পেশিগুলো আরও শক্তিশালী করা সম্ভব। বিশেষ করে যারা বয়সে তরুণ, তারা এই ধরনের ব্যায়াম অনায়াসে করতে পারবেন। কিন্তু এই ধরনের ব্যায়ামের মাধ্যমে আপনার পেশিবহুল শক্তিশালী করতে হলে শরীরে অতিরিক্ত ফ্যাট থাকা যাবে না। বিশেষ করে আজকের দিনে যারা মডেলিং কিংবা মিডিয়া জগতের সঙ্গে আছেন তারা বেশিরভাগই এই ধরনের জিম করে থাকেন।
তবে বর্তমানে একটি ট্রেন্ড হচ্ছে নিজেকে ফিটভাবে উপস্থাপন করা। তাই তরুণ-তরুণী সবাই বডি বিল্ডিং জিমে ঝুঁকছে বেশি। এই ধরনের ব্যায়ামে ব্যক্তিকে ওয়েট ট্রেনিং দেওয়া হয়। এই ব্যায়াম শরীরের প্রত্যেকটি পার্টের পেশি আলাদাভাবে কাজ করে। বিশেষ করে বুকের ব্যায়ামের জন্য বেঞ্চ প্রেস, হাতের পেশি শক্তিশালী করতে বাই সেপ কিংবা ট্রাই সেপের মতো ব্যায়াম দেওয়া হয়। এ ছাড়া শোল্ডার ও পায়ের জন্য রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন ব্যায়াম। তবে চেস্ট, হাত ও পা এগুলোর মধ্যে অনেক ধরনের জিম আছে। তাই বিশেষ করে ওয়েট ট্রেনিং ব্যায়ামে ব্যক্তিকে তিন দিন আলাদা ব্যায়াম দেওয়া হয়।
শেষটি হচ্ছে ‘ফ্যাট লুস’ জিম। যারা বেশি মোটা কিংবা শরীরের অতিরিক্ত মেদ জমে গেছে তারা এই ধরনের ব্যায়াম করবেন। ফ্যাট লুস করা বাকি দুই ধরনের জিম থেকে একটু বেশি কঠিন, তাই এই ধরনের শরীরচর্চায় মানসিকভাবে ধৈর্যশীল হওয়া প্রয়োজন। সাধারণত এদের কার্ডিও ভাসকুলার ট্রেনিংয়ে বেশি জোর দেওয়া হয়, কারণ ফ্যাট লুস করাই এদের প্রধান উদ্দেশ্য।
বর্তমানে তরুণ-তরুণীরা স্বাস্থ্যসচেতন। সঠিক ডায়েটের সাথে নিয়মিত মর্নিংওয়াক, এক্সারসাইজ, জিম সবকিছুই আমাদের দৈনন্দিন রুটিনে জায়গা করে নিয়েছে। জিমে ওয়াকআউটের পাশাপাশি সেখানকার নিয়ম-কানুন, আচরণবিধি সম্পর্কে সচেতন থাকা, সঠিক ব্যবহার ও পাশাপাশি নিয়ম-কানুন মেনে জিম করতে হবে। জিমের কিছু করণীয়-
জিমে ভর্তি হওয়ার আগে খোঁজখবর নিয়ে ভেবে নিন কোন জিম সেন্টারে আপনি ভর্তি হতে পারবেন। আপনার বাসার কাছাকাছি কোনো ভালো জিম সেন্টার থাকলে সেখানেই ভর্তি হতে পারেন; এতে আপনার টাইম ম্যানেজমেন্ট ও যাতায়াতে সুবিধা হবে। প্রথমেই জিমের ফিটনেস ট্রেনারের সাথে যোগাযোগ করুন। আপনি কী ধরনের ফিটনেস তৈরি করতে চান তা ট্রেনারের সাথে খোলাখুলি আলোচনা করে নিন। জিম করার জন্য কতটা সময় আপনি বরাদ্দ রেখেছেন, কোন সময়টা আপনার জন্য উপযোগী, কোনো শারীরিক অসুস্থতা আছে কিনা সেসব বিষয় নিয়ে ফিটনেস এক্সপার্টের সাথে কথা বলে আপনার ফিটনেস পরিকল্পনা তৈরি করুন।
জিমের প্রাথমিক পর্যায়ে প্রতিদিন ঘণ্টাখানেক জিম করুন এবং তা আস্তে আস্তে বাড়ান। প্রথম দিকে ২ থেকে ৩ ঘণ্টা করে ব্যায়াম করলে শরীরের ওপর চাপ পড়তে পারে।জিম করার সময় অবশ্যই জিমের উপযোগী পোশাক এবং ফিটনেস জুতা ব্যবহার করবেন। এ ছাড়া অন্যান্য সুবিধার জন্য একটি ব্যাগ সবসময় নিজের কাছে রাখবেন। এতে তোয়ালে, পানির বোতল ইত্যাদি প্রয়োজনীয় জিনিস রাখতে পারেন।
প্রথম মাসে জিম করার জন্য আধঘণ্টা বরাদ্দ রাখলে হাতে মোট ১ ঘণ্টা সময় রাখুন। জিমের সময় সকাল বা বিকেলে নির্ধারণ করুন। সকাল বা বিকেলে জিম করার জন্য প্রস্তুতি নিতে বেশ কিছু দিন লাগবে। মনোযোগ দিয়ে জিমের যন্ত্রপাতির ব্যবহার শেখার চেষ্টা করুন। জিম শেষ করার পর অন্তত ১৫ মিনিট রিল্যাক্স করুন।
প্রাথমিক পর্যায়ে জিম থেকে ফিরেই কাজে বেরোনোর জন্য তাড়াহুড়া করবেন না। নিজের শরীরের জন্য উপযোগী পরিমাণ খাবার খেয়ে একটু রেস্ট নিয়ে অফিস কিংবা অন্য কোনো কাজে বের হবেন। ঘরে ও বাইরে অতিরিক্ত কাজের চাপ থাকলে সপ্তাহে তিন দিন জিম করতে যেতে পারেন। বাকি দিনগুলো বাসাতেই ফ্রিহ্যান্ড এক্সারসাইজ করতে পারেন। ব্যায়াম করার সময় নিজেকে নির্দিষ্ট জায়গার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখুন, যাতে অন্যদের সাথে ধাক্কাধাক্কি না হয়। ব্যায়ামের পর ইনস্ট্রুমেন্ট যথাস্থানে রেখে দিন। সেগুলো যদি নিজের সুবিধামতো অ্যাডজাস্ট করে থাকেন তবে তা স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে দিন, যাতে অন্যদের অসুবিধা না হয়। ব্যায়ামের কোনো ইনস্ট্রুমেন্ট যদি একাধিকবার ব্যবহার করতে হয়, তবে সেটা আটকে না রেখে রেস্টের সময় তা অন্যদের ব্যবহার করতে দিন। জিমে ব্যায়ামের সময় খুব বেশি শব্দ বা চেঁচামেচি করবেন না। ইনস্ট্রুমেন্টগুলো নাড়াচাড়া করার সময় শব্দ করবেন না। নিজের জামাকাপড়, জুতা, তোয়ালে, পানির বোতল এবং অন্যান্য সামগ্রী ছড়িয়ে রাখবেন না।ব্যায়ামের সময় মোবাইলে গল্প করবেন না। পরিচিত কারও সাথে খোশগল্পে মেতে উঠবেন না। এতে ব্যায়ামের প্রতি আপনারসহ অন্যদেরও মনোযোগ নষ্ট হবে। চুল শক্ত করে বাঁধুন। চুল খোলা রাখলে আপনার পাশাপাশি অন্যদের অসুবিধা হতে পারে।
জিমের খাদ্য তালিকা
নতুন কেউ জিমে ভর্তি হলে একটা বেপার ঘটে, অনেক উপদেষ্টা আসে, তারা সাপ্লিমেন্ট (হাই প্রোটিন) নিতে বলে তাড়াতাড়ি বডি বাড়াতে। ওদের প্রধান কাজ এগুলো বিক্রি করা। এসব নেয়া ঠিক নয়, অন্তত শুরুতে তো নয়ই। বডি যখন সেইপে চলে আসবে তখন নেয়া যায়, তাও দেশের বাইরে থেকে ক্রয় করা ভালো। এ দেশে সস্তায় ইন্ডিয়ান যেটা পাওয়া যায় ওটা অতটা ভালো হয় না। না খাওয়াটা বেশি ভালো।যেই দিন থেকে জিম শুরু করবেন, ওই দিন ভুলেও একসাথে পুরা রুটিন ফলো করবেন না। তাহলে আমাকে গালি দিয়ে জিম ছেড়ে দিবেন। আর ব্যথায় তো রাতের ঘুম হারাম হবেই।
জিমের শুরুর দিন বডির টিস্যু ছিঁড়বে এবং এক্সপান্ড করবে। ভয়ের কারণ নেই, এই ব্যথা ৩ দিন থাকে, এই ব্যথার কারণে ওষুধ খাওয়া ঠিক নয়। আর ব্যথার ভয়ে জিম না ছেড়ে হালকা হালকা ব্যথার ওপর জিম করা ভালো, ব্যথা দ্রুত কমবে তাতে।
জিমে ঢুকেই নিজে যতটা পারেন তার চেয়ে বেশি ওয়েট নিয়ে টানাটানি শুরু করবেন না, এখানে পাওয়ার দেখানোর দরকার নেই, আস্তে আস্তে অ্যানার্জি বাড়বে, তখন হেভিওয়েট নিতে পারবেন (অতিরিক্ত ওয়েট নেয়ার কারণে লিগামেন্ট ছিঁড়ে যেতে পারে, মেরুদণ্ডে টান খেতে পারেন, যা আজীবন ভোগাবে)।কাঁচা ছোলা দ্রুত মাসল বিল্ড করে, কলা বেশ কাজে লাগে, রাতে ঘুমানোর আগে এক গ্লাস দুধ ভালো কাজ করে, মাছ আর গোশত পাইলে ইচ্ছেমতো খান, চর্বি ছাড়া হলে ভালো, ডিম কুসুম ছাড়া খাওয়া ভালো, যাদের বডি বেশি শুকনা তারা একটা কুসুম খেতে পারেন (ডিমের সাদা অংশ প্রোটিন, কুসুমে ফ্যাট)।
শরীরচর্চা যখন ক্ষতির কারণ : সব কিছুরই ভালো ও মন্দ দিক থাকবে। শরীরচর্চাও এর ব্যতিক্রম নয়। শরীরচর্চা করতে গিয়ে হরহামেশাই অনেকে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়ে থাকেন। দেখা যায় জিম বা ব্যায়ামাগারে গিয়ে ভারি ব্যায়াম করতে গিয়ে এরা শরীরের ঘাড়, কোমর, পা ও হাঁটুতে আঘাত প্রাপ্ত হয়েছেন। অনেক ব্যায়ামাগারেই প্রশিক্ষিত ট্রেইনার নেই। শরীরের ধরন অনুযায়ী ব্যায়াম না করলে উল্টো ফলই হবে।
অনেকের ধারণা জিমে গিয়ে খুব করে কয়েকদিন ব্যায়াম করলেই শরীর ফিট হয়ে যাবে। এটি ভ্রান্ত ধারণা। যারা অভিনয়, মডেলিং বা শরীর গঠন প্রতিযোগিতায় যেতে চান কেবল তাদেরই জন্য ব্যায়ামাগার বা জিম এক্সারসাইজ মানানসই। অনেকে শরীর গঠনের জন্য নানা ধরনের অনুমোদনহীন খাদ্য বা স্টেরয়েড গ্রহণ করেন যা একেবারেই ভুল কাজ। এতে শরীরে মারাত্মক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হতে পারে।
ব্যথার রোগীরা কি ব্যায়াম করবেন : ব্যথার রোগীদের অবশ্যই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী বৈজ্ঞানিক ব্যায়াম করতে হবে। যাকে আমরা Therapeutie Exercise বলি। শরীরের বিশেষ বিশেষ অংশের জন্য বিশেষ ব্যায়াম আছে যা কেবল চিকিৎসকেরই ব্যবস্থাপত্র অনুযায়ী করতে হবে। ধরুন হাঁটু ব্যথার রোগীরা যদি খুব বেশি হাঁটেন তবে হাঁটু ব্যথা বেড়ে যেতে পারে, এক্ষেত্রে রোগী সাঁতার কাটতে পারেন বা স্ট্যাটিক সাইক্লিং করতে পারেন।
কতক্ষণ ব্যায়াম করবেন : ৩০ মিনিট করে সপ্তাহে ৫ দিন ব্যায়ামই শরীর সুস্থ রাখার জন্য যথেষ্ট। তবে শরীরের গঠন ও রোগ নিয়ন্ত্রণের জন্য আরও বেশি সময় ব্যায়াম করা যেতে পারে। যেমন একজন ডায়াবেটিক রোগী সপ্তাহে ৫ দিন ১ ঘণ্টা করে হাঁটলে সুস্থ থাকেন। যারা ওজন কমাতে চান তাদের উচিত প্রতিদিন ৪০-৪৫ মিনিট হাঁটা। এই হাঁটা কিন্তু ঢিমেতালে হাঁটা নয়। এমন গতিতে হাঁটতে হবে যাতে শরীর ঘেমে ওঠে, গতি হবে ঘণ্টায় ৫-৬ কিলোমিটার।
For Advertisement
পূর্বাকাশ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
© purbakash 2021
-Developed by WebsXplore
Comments: