For Advertisement
বর্জ্যের গন্ধে বিবাহ পর্যন্ত বাধাগ্রস্ত হচ্ছে অত্র এলাকার ছেলে-মেয়েদের!

কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের (কুসিক) দূষিত বর্জ্যের ভাগাড় থেকে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পরিবেশ দূষণ হয়ে স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছে সদর উপজেলার ২২ গ্রামের অন্তত অর্ধলক্ষাধিক মানুষ। স্থানীয় বাসিন্দারা এর প্রতিকার চেয়ে সিটি করপোরেশনসহ বিভিন্ন দপ্তরে একাধিক অভিযোগ দিয়েও কোনো লাভ হয়নি। জনস্বাস্থ্য ও জীববৈচিত্র্য রক্ষা, পরিবেশ দূষণ রোধে এসব আবর্জনা সংগ্রহ, পরিবহন, প্রক্রিয়াজাতকরণ হবে বলে আশ্বাস দিলেও গত ১১ বছরেও কোনো অগ্রগতি দেখাতে পারেনি সিটি করপোরেশন। বিষয়টি নিয়ে স্থানীয়াদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে।
সরেজমিন ঘুরে জানা গেছে, কুমিল্লা সিটি করপোরেশন থেকে অদূরে আর্দশ সদর উপজেলার ভারত সীমান্তবর্তী জগন্নাথপুর ইউনিয়নের দৌলতপুর-ঝাঁকুনিপাড়া এলাকায় অধিগ্রহণ করে প্রায় ১০ একর জায়গায় ওপর স্থাপন করা হয়েছে ময়লার ভাগাড়। সেখানে সিটির ২৭নং ওয়ার্ডের প্রায় ১০ লাখ মানুষের ফেলে দেওয়া বাসাবাড়ির ময়লা, তরল, গ্যাসীয়, বিষাক্ত ও বিষহীন বিভিন্ন বর্জ্য ফেলা হয়। প্রতিদিন নগরীর অন্তত ১০০ মেট্রিক টন বর্জ্য ফেলা হয় এ ভাগাড়ে। এর দুর্গন্ধ ও বিষাক্ত ধোঁয়ায় অতিষ্ঠ ২২ গ্রামের প্রায় অর্ধলক্ষ মানুষ। এর ফলে শ্বাসকষ্ট, চর্ম ও ডায়রিয়াসহ নানা রোগের প্রাদুর্ভাব ছড়িয়ে পড়ছে স্থানীয় বাসিন্দাদের মাঝে।ক্ষতিগ্রস্ত গ্রামগুলির মধ্যে রয়েছে, ঝাঁকুনিপাড়া, দৌলতপুর, জগন্নাথপুর, বালুতুপা, মনাগ্রাম, বাজগড্ডা, বারপাড়া, তেতুইপাড়া, খামার কৃষ্ণপুর, অরণ্যপুর, দাউদের খেরা এবং পাঁচথুবী ইউনিয়নের সুবর্ণপুর।নারী-পুরুষ মিলিয়ে স্থানীয় একাধিক ব্যক্তির সাথে কথা বললে তারা জানান, সিটি করপোরেশনের ময়লার ভাগাড় আমাদের জন্য এক অভিশাপ। দুর্গন্ধ ও বিষাক্ত ধোঁয়ায় এলাকায় বসবাস করা দুষ্কর। আত্মীয়-স্বজনরাও বেড়াতে আসেন না দুর্গন্ধের কারণে। কেউ এলে লজ্জায় পড়তে হয়। বিশেষ করে উপযুক্ত ছেলে-মেয়েদের ভালো কোনো জায়গায় বিয়ে-সাদি হচ্ছে না। ঘরে থেকে এদের বয়স বেড়ে যাচ্ছে। এসব বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে অবগত করেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি।
স্থানীয় জগন্নাথপুর ইউপি চেয়ারম্যান মামুনুর রশীদ বলেন, গত ১০ বছর ধরে কুমিল্লা সিটি করপোরেশসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে কথা বলতে বলতে আমি ক্লান্ত। এ বিষয়ে এখন আর কথা বলতে চাইনা। ময়লার দুর্গন্ধে ইউনিয়ন পরিষদ অফিসে বসে যে কাজ করবো সে পরিবেশও নেই। এছাড়াও বর্জ্যের দুর্গন্ধ ও আগুনে পোড়ানো ধোঁয়ায় ময়লার স্তূপের আশপাশের এলাকার প্রায় ১৫-২০টি গ্রামের পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। এতে অন্তত অর্ধলক্ষাধিক মানুষের বসবাস করা কষ্টকর হয়ে পড়ছে। সময় ক্ষেপন না করে এ বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানাচ্ছি সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষের প্রতি।বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) কুমিল্লার সভাপতি ডা. মোসলেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, জনবসতির মধ্যে ময়লার স্তূপ জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষের অন্তত এ বিষয়টি বোঝার কথা। নগরবাসীদের সুবিধা দিতে গ্রামের মানুষ কেন কষ্ট পাবে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে এ ব্যাপারে উদ্যোগী হতে হবে।
পরিবেশ অধিদফতর কুমিল্লার আঞ্চলিক উপপরিচালক শওকত আরা কলি বলেন, বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় আধুনিক পদ্ধতি অনুসরণ করতে কুমিল্লা সিটি করপোরশেন কর্তৃপক্ষকে বিভাগীয় অফিস থেকে একাধিকবার চিঠি দেয়া হয়েছে। তারা সেখানে গিয়ে নানা প্রতিশ্রুতি দিয়ে আসছেন। কিন্তু বাস্তবে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করেন না।
কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের মেয়র মনিরুল হক বলেন, এ বিষয়ে আমি আবগত রয়েছি। আধুনিক পদ্ধতিতে বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় নতুন প্রকল্পের জন্য ২৫৫ কোটি টাকার প্রজেক্ট মন্ত্রণালয়ে জমা দেয়া হয়েছে। প্রকল্পটি অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছি। এটি বাস্তবায়ন করা গেলে জনদুর্ভোগ ও পরিবেশ দূষণ থাকবে না।
For Advertisement
পূর্বাকাশ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
© purbakash 2021
-Developed by WebsXplore
Comments: